অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম | সহজ উপায় জানুন!
আসুন, অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার সহজ নিয়মগুলো জেনে নেই! বর্তমান যুগে সবকিছুই এখন অনলাইননির্ভর। বাসের টিকেট থেকে শুরু করে সিনেমার টিকেট, সবই আপনি ঘরে বসে কাটতে পারেন। তাহলে ট্রেনের টিকেট কেন নয়? হ্যাঁ, ট্রেনের টিকেটও এখন অনলাইনে কাটা যায়। এতে আপনার সময় বাঁচে, ভোগান্তি কমে, আর টিকেট পাওয়াও যায় সহজে।

অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম
অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম জানা থাকলে আপনি খুব সহজেই নিজের টিকেট কাটতে পারবেন। ভাবছেন, এটা খুব কঠিন কিছু? একদমই না! একটা স্মার্টফোন অথবা কম্পিউটার আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই আপনি টিকেট কাটতে পারবেন। চলুন, ধাপে ধাপে জেনে নেই কিভাবে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটতে হয়:
১. বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা
প্রথমেই আপনাকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে (https://eticket.railway.gov.bd/) একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। যদি আগে থেকে অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে সরাসরি লগইন করতে পারবেন।
অ্যাকাউন্ট তৈরির নিয়ম:
- ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে "Register" অথবা "সাইন আপ" অপশনে ক্লিক করুন।
- আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন - নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি, জন্ম তারিখ ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করুন এবং সেটি সংরক্ষণ করুন।
- মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল আইডি যাচাই করার জন্য ওটিপি (OTP) পাঠানো হবে। ওটিপি সঠিকভাবে প্রবেশ করিয়ে অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় করুন।
২. লগইন করা
অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে, আপনার ইউজার আইডি (সাধারণত মোবাইল নম্বর) এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।
৩. গন্তব্য এবং তারিখ নির্বাচন করা
লগইন করার পর আপনি একটি সার্চ অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে আপনার যাত্রা শুরুর স্থান (From Station) এবং গন্তব্য স্থান (To Station) নির্বাচন করুন। এরপর আপনার যাত্রার তারিখ (Date of Journey) নির্বাচন করুন।
৪. ট্রেনের তালিকা এবং আসন নির্বাচন করা
তারিখ দেওয়ার পর ওই রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর তালিকা দেখতে পাবেন। প্রতিটি ট্রেনের সময়সূচি, বিরতি এবং টিকিটের মূল্য তালিকা দেওয়া থাকবে। আপনার পছন্দসই ট্রেনটি বাছাই করুন। এরপর "Find Seats" অপশনে ক্লিক করে কোন ক্লাসের টিকেট কাটতে চান, সেটি নির্বাচন করুন।
৫. আসন নির্বাচন এবং যাত্রী তথ্য দেওয়া
আসন availability দেখার পর আপনার পছন্দসই আসন সংখ্যা নির্বাচন করুন। এরপর যাত্রীদের নাম, বয়স, লিঙ্গ (Gender) ইত্যাদি তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন। এখানে মনে রাখতে হবে, জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর দিয়ে টিকেট কাটলে পরবর্তীতে সেটি verification এর জন্য লাগতে পারে।
৬. পেমেন্ট করা
সব তথ্য দেওয়ার পর পেমেন্ট করার পালা। বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভিন্ন অনলাইন পেমেন্ট অপশন গ্রহণ করে, যেমন - বিকাশ, রকেট, নগদ, ভিসা কার্ড, মাস্টারকার্ড ইত্যাদি। আপনার সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো একটি অপশন ব্যবহার করে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
পেমেন্ট করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার:
- নিরাপদ পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করুন এবং নিশ্চিত করুন আপনার সংযোগটি সুরক্ষিত (https)।
- পেমেন্ট করার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না এবং সমস্ত তথ্য দুইবার যাচাই করুন।
- পেমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার পর কনফার্মেশন মেসেজ অথবা ইমেইল সংরক্ষণ করুন।
11111
৭. ই-টিকেট ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করা
পেমেন্ট সফল হলে আপনি আপনার ই-টিকেট ডাউনলোড করার অপশন পাবেন। ই-টিকেটটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন। যদি প্রিন্ট করা সম্ভব না হয়, তাহলে টিকিটের সফট কপিটি আপনার মোবাইল ফোনে সংরক্ষণ করুন।
৮. যাত্রা করার পূর্বে
যাত্রার দিন স্টেশনে যাওয়ার সময় অবশ্যই আপনার ই-টিকেটের প্রিন্ট কপি অথবা সফট কপি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে রাখুন। টিকেট চেকিংয়ের সময় এটি দেখাতে হতে পারে।
অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার জন্য অ্যাপ
বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজে টিকেট কাটতে পারবেন। "Rail Sheba" নামের এই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যায়। অ্যাপটি ব্যবহার করে টিকেট কাটা ওয়েবসাইটে টিকেট কাটার মতোই সহজ।
অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা:
- সহজ ইউজার ইন্টারফেস।
- দ্রুত টিকেট কাটার সুবিধা।
- টিকিট সংক্রান্ত তথ্য হাতের কাছেই পাওয়া যায়।
- পেমেন্ট করার একাধিক অপশন।
ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়মাবলী
ট্রেনের টিকেট কাটার সময় কিছু নিয়মাবলী অনুসরণ করা উচিত। এতে আপনার টিকেট কাটার অভিজ্ঞতা আরও সহজ এবং ঝামেলামুক্ত হবে।
22222
কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলী:
- একজন ব্যক্তি তার আইডি দিয়ে সর্বোচ্চ ৪টি টিকেট কাটতে পারবেন।
- যাত্রার তারিখের কমপক্ষে কয়েক ঘণ্টা আগে টিকেট কাটার চেষ্টা করুন, যাতে আপনি আপনার পছন্দসই আসন পান।
- পেমেন্ট করার সময় সঠিক তথ্য দিন এবং রশিদ সংরক্ষণ করুন।
- স্টেশনে পর্যাপ্ত সময় আগে পৌঁছান, যাতে আপনি ট্রেন ছাড়ার আগে নিজের আসন খুঁজে নিতে পারেন।
অনলাইনে ট্রেনের সিট খালি দেখার নিয়ম
অনলাইনে ট্রেনের সিট খালি আছে কিনা, তা দেখতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে অথবা অ্যাপে গিয়ে ট্রেনের তালিকা থেকে নির্দিষ্ট ট্রেনের সিট availability চেক করতে পারেন।
কাউন্টারে গিয়ে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম
যদি আপনি অনলাইনে টিকেট কাটতে স্বচ্ছন্দ না হন, তবে কাউন্টারে গিয়েও টিকেট কাটতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে স্টেশনের টিকেট কাউন্টারে গিয়ে আপনার গন্তব্য এবং তারিখ জানাতে হবে। কাউন্টার থেকে টিকেট কাটার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা অন্য কোনো পরিচয়পত্র সাথে রাখা ভালো।
ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম ২০২৫: নতুন কিছু পরিবর্তন
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রায়ই টিকেট কাটার নিয়মে কিছু পরিবর্তন আনে। ২০২৫ সালে টিকেট কাটার নিয়মে কিছু নতুনত্ব এসেছে।
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো হলো:
- টিকিট কালোবাজারি रोकने के लिए জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকেট কেনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
- অনলাইনে টিকিটের কোটা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে अधिक সংখ্যক মানুষ घर বসে টিকেট কাটতে পারে।
- পেমেন্ট सिस्टम আরও উন্নত করা হয়েছে, जिससे पेमेंट করার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত এবং নিরাপদ হয়।
ট্রেনের টিকেট কাটার সময় কিছু সাধারণ ভুল এবং সেগুলো থেকে বাঁচার উপায়
টিকেট কাটার সময় আমরা প্রায়ই কিছু ভুল করে থাকি। এই ভুলগুলো এড়িয়ে চললে টিকেট কাটার প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে।
সাধারণ ভুলগুলো এবং তাদের সমাধান:
- ভুল তথ্য দেওয়া: টিকেট কাটার সময় নিজের নাম, বয়স, ইত্যাদি তথ্য সঠিকভাবে দিন।
- পেমেন্ট সংক্রান্ত সমস্যা: পেমেন্ট করার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না এবং নিশ্চিত হয়ে পেমেন্ট করুন। যদি পেমেন্ট আটকে যায়, তাহলে तुरंत ব্যাংক অথবা পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ করুন।
- ডুপ্লিকেট টিকেট কাটা: একাধিকবার টিকেট কাটার চেষ্টা করলে ডুপ্লিকেট টিকেট তৈরি হতে পারে। তাই একবার টিকেট কাটার পর কনফার্মেশন মেসেজ অথবা ইমেইল না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
ট্রেনের টিকেট কিভাবে ফেরত দেবো?
যদি কোনো কারণে আপনার যাত্রা বাতিল করতে হয়, তবে আপনি অনলাইনে অথবা কাউন্টারে গিয়ে টিকেট ফেরত দিতে পারেন। টিকেট ফেরতের নিয়মাবলী বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত দেওয়া আছে। সাধারণত, যাত্রার সময়ের আগে টিকেট ফেরত দিলে কিছু টাকা কেটে রেখে বাকি টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
33333
টিকেট ফেরত দেওয়ার নিয়ম:
- অনলাইনে টিকেট ফেরত দিতে হলে, আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করে টিকেট অপশনে যান এবং সেখানে ক্যান্সেল করার অপশন পাবেন।
- কাউন্টারে টিকেট ফেরত দিতে হলে, টিকেট এবং নিজের পরিচয়পত্র নিয়ে স্টেশনে যান।
ট্রেনের টিকেট কাটার সহজ কিছু টিপস
- সব সময় চেষ্টা করুন যাত্রার কয়েক দিন আগে টিকেট কাটার জন্য।
- বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে অফার এবং ডিসকাউন্ট সম্পর্কে নজর রাখুন।
- পেমেন্ট করার সময় একটি স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করুন।
- টিকেট কাটার সময় Captcha code সঠিকভাবে পূরণ করুন।
কী takeaways
- বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে অনলাইনে টিকেট কাটতে পারবেন।
- Rail Sheba অ্যাপ ব্যবহার করে টিকেট কাটা আরও সহজ।
- টিকেট কাটার সময় সঠিক তথ্য দিন এবং পেমেন্ট করার সময় সতর্ক থাকুন।
- যাত্রা বাতিল করতে হলে, টিকেট ফেরত দেওয়ার নিয়মাবলী অনুসরণ করুন।
- জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকেট কেনা এখন বাধ্যতামূলক।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
১. অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার জন্য কী কী প্রয়োজন?
উত্তর: অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার জন্য আপনার একটি স্মার্টফোন বা কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ, একটি মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি এবং বিকাশ, রকেট বা অন্য কোনো অনলাইন পেমেন্ট অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
২. আমি কিভাবে অনলাইনে ট্রেনের সিট চেক করব?
উত্তর: বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে অথবা Rail Sheba অ্যাপে গিয়ে ট্রেনের তালিকা থেকে নির্দিষ্ট ট্রেনের সিট availability দেখতে পারবেন।
৩. অনলাইনে টিকেট কাটার পর যদি পেমেন্ট আটকে যায় তাহলে কী করব?
উত্তর: যদি পেমেন্ট আটকে যায়, তাহলে तुरंत আপনার ব্যাংক অথবা পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ করুন। এছাড়াও, বাংলাদেশ রেলওয়ের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করে সাহায্য নিতে পারেন।
৪. আমি কি অন্যের জন্য আমার আইডি দিয়ে টিকেট কাটতে পারব?
উত্তর: হ্যাঁ, আপনি আপনার আইডি দিয়ে অন্যের জন্য টিকেট কাটতে পারবেন, তবে টিকেট কাটার সময় যাত্রীর সঠিক নাম এবং পরিচয়পত্র নম্বর দিতে হবে। একজন ব্যক্তি তার আইডি দিয়ে সর্বোচ্চ ৪টি টিকেট কাটতে পারবেন।
৫. ই-টিকেট হারিয়ে গেলে কি করব?
উত্তর: ই-টিকেট হারিয়ে গেলে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করে টিকেটটি পুনরায় ডাউনলোড করতে পারবেন। এছাড়াও, আপনি বাংলাদেশ রেলওয়ের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করে সাহায্য নিতে পারেন।
৬. অনলাইনে ট্রেনের টিকেট ফেরত দেওয়ার নিয়ম কি?
উত্তর: অনলাইনে টিকেট ফেরত দিতে হলে, আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করে টিকেট অপশনে যান এবং সেখানে ক্যান্সেল করার অপশন পাবেন। টিকেট ফেরতের নিয়মাবলী বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত দেওয়া আছে। সাধারণত, যাত্রার সময়ের আগে টিকেট ফেরত দিলে কিছু টাকা কেটে রেখে বাকি টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
৭. Rail Sheba অ্যাপটি কোথায় পাব?
উত্তর: Rail Sheba অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর (Android ব্যবহারকারীদের জন্য) এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোর (iOS ব্যবহারকারীদের জন্য) থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়।

বাংলাদেশ জেকচেন এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url